story of dell computer

Story of Dell Computer

কলেজ ড্রপ করে নিজের স্টার্টাপের পিছে ছুটা কিংবা স্টার্টআপ শব্দটা পরিচিতি পাওয়ার অনেক আগে ৮০’র দশকে যারা স্টার্টআপ শুরু করেছিল, তাদের একজন হলো মাইকেল ডেল। ডেল কোম্পানি বর্তমানে সেরা ৩ কম্পিটার সেলারদের একটি, বছরে মিলিয়ল কম্পিটার বিক্রি করে । 

 ১৯৮৪ সালে শুরু করা এই স্টার্টআপের সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং বিষয় আইডিয়া কিংবা টাকা না। এটা হচ্ছে মাইকেল ডেল নিজে। 

ডেল এর বেড়ে উঠা হিউসটনে। তখন, ৭০ এর দশকে ডিজিটাল টেকনোলজি সমুহ মাত্র গ্রো হচ্ছিল। শৈশব থেকে ক্যালকুলেটর, পার্সোনাল কম্পিটারের প্রতি তার আগ্রহ ছিল।

নিউজপেপার কোম্পানিতে জব করার সময় তার কাজ ছিল রেন্ডম মানুষজনকে কল দিয়ে নিউজ সাবস্ক্রিপশন সেল করা। তখন তিনি ৩ টা জিনিস অবজার্ব করেন 

  1. ক্রেতার সাথে তার ভাষায় (accent) , তার মতো কথা বললে সে কিনতে আগ্রহী হয়। 
  2. নতুন বিবাহ করতে চাওয়া মানুষ সাবস্ক্রিপশন কিনে ।
  3. নতুন বাড়ি কেনা/ মুভ করা মানুষরা নিউজ সাবস্ক্রিশন কিনে। 

সে সময় বিয়ে করার জন্য কোর্টে আবেদন করা লাগতো। আর আবেদনকারীর তথ্য পাবলিক থাকায় মাইকেল ডেল সেসব ইনফো জোগাড় করে, তাদের মেইল করত। 
নতুন তৈরি হওয়া বিল্ডিং এ গিয়ে ফ্রি নিউজপেপার অফার করে, বিল্ডিং ম্যানেজার থেকে সব অ্যাপার্টমেন্ট মালিকদের ইনফো নিত।

এই সবই করত যখন তার বয়স ১৭ ছিল । এতে করে তার বাৎসরিক আয় হয় ১৮ হাজার ডলারে কাছাকাছি । বর্তমান বাজারের সাথে তুলনা করলে মাসে সে টাকার হিসেবে ৪২ হাজার টাকা কামাই করত।

সময়টা ছিল কম্পিউটারের বিকাশকাল। অ্যাপল ২, আইবিএম কম্পিউটার রিলিজের সময়কাল। কম্পিউটারের হার্ডওয়ার সিস্টেম কিভাবে কাজ করে তা দেখার সে কম্পিউটার কিনে তার পার্টস খুলে পরীক্ষা করত। 

ফ্যামিলির সবাই ছিল ডাক্তার। সে সুবাধে মেডিকেলে পড়ার জন্য কলেজে ভর্তি হয়। কিন্তু কম্পিটারের মার্কেট তাকে দারুণভাবে আকর্ষন করে। একে তো কম্পিউটার ছিল খুবই দামী, তারপর সাধারন মানুষের হাতে আসতে লেগে যেত অনেক সময়। তার থেকেও বড় সমস্যা ছিল ইম্প্রুভমেন্ট। নতুন ভার্সন, নতুন আপগ্রেড আসতে সময় বেশি লাগত। 

মাইকেল ডেল ডর্মেটরিতে থাকা অবস্থায়, কম্পিউটার কিনে, তাদের পার্টসগুলো আলাদা করে, নিজের মত করে কম্পিউটার বানাত। সেগুলো বিক্রি করে বেশ ভালো টাকা কামাই করত। 

আইবিএমের কম্পিউটারগুলোয় তখন হার্ড ড্রাইভ ছিলনা। তাই তিনি নিজে নতুন কম্পিউটার কিনে , হার্ড ড্রাইভ, ক্যাবল যোগ করে, সফটওয়্যার লিখে সেগুলোকে কম্পিউটারে যুক্ত করে আরো উন্নত ভার্সন কম্পিউটার বানিয়ে ফেলতেন। 

সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে কম্পিউটারের আগ্রহ ছিলনা। তার এই কম্পিউটারের কাস্টমাররা ছিল ডাক্তার, একাউন্ট্যান্টরা। এভাবে করে সে মাসে ৮০-৯০ হাজার ডলার কামাই করত মাসে। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৯ কি ২০। 

কম্পিউটারের প্রতি নিজের প্যাশন বুঝতে পেরে, মেডিক্যাল বাদ দিয়ে কোম্পানি খুলে বসেন। আইবিএমের তুলনায় তার তৈরি কম্পিউটার ছিল বেশি ফাস্ট, দামও ছিল অর্ধেক। তাদের বেশিভাগ কাস্টমার ছিল বিভিন্ন ছোট কোম্পানি । 

তখন পার্সোনাল কম্পিউটার বিক্রি জন্য ছিল best buy, radioshake এর মত রিটেইল স্টোর , যারা মূল দামের থেকে ২০-৩০% বেশী দিয়ে কম্পিউটার বিক্রি করত। এ সমস্যা সমাধানে মাইকেল ডেল সরাসরি কাস্টমারদের টার্গেট করে ম্যাগাজিন, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিত। মোবাইলের মাধ্যমে কম্পিউটার সমস্যার সমাধান দিত। অ্যাপল, আইবিএমের বড় বড় কোম্পানিসমুহের এরকম ডিটেইল, কাস্টমার বেইস বিজ্ঞাপনের সুযোগ ছিলনা। একই সাথে বড় কোম্পানি গুলোর জন্য চাহিদা অনুসারে কনফিগারেশন, সফটওয়্যার সেটাপ করে পার্সোনাইলজ করে দেয়ার মাধ্যমে কম্পিউটার বাজারের বড় অংশ দখল করে দেয়। 

মাইকেল ডেলের যখন ২১ বছর বয়স, তার কোম্পানির রেভিনিউ ছিল ৬৬ মিলিয়ন ডলার। 

প্রতি বছর তার কোম্পানির এত বেশি গ্রোথ ছিল যে, ক্যাশ ফ্লো রাখার জন্য ১৯৮৮ সালে তার পাবলিক ট্রেডেট কোম্পানি হয়ে যায়। 

Michael Dell featured in fortune 500

১৯৯৬ সালে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম্পিউটার কেনার সুযোগ করে দিলে, ডেল কম্পিউটার সেল কয়েকগুণ বেড়ে যায়। 

২০০৬ সাল অব্দি ডেল, পার্সোনাল কম্পিউটার বিক্রির শীর্ষে ছিল । এরপর HP কম্পিটার সে স্থান দখল করে নেয়। 

মোবাইলফোনের আধিক্য বাড়তে থাকা বাজারে পিসির চাহিদা কমে যায়, আর ডেলের রেভিনিউ কমতে শুরু করে। কোম্পানির মডেল পরিবর্তনের জন্য ২০১৩ সালে তারা প্রাইভেট কোম্পানি হয়। 

পার্সোনাল কম্পিউটার থেকে নজর সরিয়ে তারা ডাটা স্টোরেজ সার্ভিস, নেটওয়ার্ক, এন্টারপ্রাইজ সফটওয়ার এর দিকে নজর দেয় এবং তাতে সাফল্য আসা শুরু হয়। সময়ের সাথে নিজেদের পরিবর্তনের কারণেই তারা বেঁচে উঠতে পেরেছে।

২০২১ সালে ডেল টেকনোলজির রেভিনিউ দাঁড়ায় ৯৪ বিলিয়ন ডলার। 

২০০৪ সালে মাইকেল ডেল কোম্পানির CEO পদ থেকে সরে দাড়ালেও ২০০৭ সালে আবার ফিরে এসে নিজের কোম্পানিকে বাঁচিয়ে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে আসেন। 

ডেল কোম্পানির গ্রোথের মূল কারণ গুলো হল, 

১. সরাসরি কাস্টমারদের টার্গেট করে কম্পিউটার বিক্রির প্রচেষ্টা । 

২. কম দামে বেটার জিনিস , সার্ভিস দেয়া। 

৩. সময়ের তাগিদে নিজদের বিজনেস স্ট্র্যাটেজি পরিবর্তন করা। 

Source: HIBT, YT

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *