সুপারশপে গিয়ে, কার্ট নিয়ে খুজে খুজে শপিং করা Apurba Mehta ‘র পছন্দের ছিলনা। তাই সে এ সমস্যা সমাধানের জন্য তৈরি করেন “Instacart” । এই এপের মাধ্যমে আপনি প্রয়োজনীয় গ্রোসারি আইটেম সিলেক্ট করে অর্ডার করবেন। আর গ্রোসারি পৌছে যাবে আপনার দরজায়। বর্তমানে এই স্টার্টআপের ভ্যালুয়েশন প্রায় ৩৯ বিলিয়ন ডলার।

সিলিকন ভ্যালির টেক উদ্যোক্তার মত অপূর্বা হার্ভাড বা এমাইটিতে পড়েনি। তার জন্ম ও বেড়ে উঠা কানাডাতে। কম্পিউটার সাইন্সে গ্র্যাজুয়েশন করে সিয়েটলে অ্যামাজনে যোগ দেয় সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টে। কাজে আগ্রহ হাড়িয়ে ফেলায় দেড় বছর পর চাকরি ছেড়ে দেয়। নতুন কিছুর খোঁজে বিভিন্ন টেক টকে যোগ দেয়। স্টার্টআপের প্রতি নিজের আগ্রহ বুঝতে পারে স্যান ফান্সিস্কোতে মুভ করে। স্যান ফ্রান্সিস্কোতে হচ্ছে সব উদ্যোক্তাদের বসবাস। রাতে ফ্রেন্ডের বাসার সোফায় থাকতো আর দিনে মাথায় যেসব আইডিয়া আসত, তা বানানোর জন্য কোডিং করত। এভাবে প্রায় দু বছর কেটে যায়। বিভিন্ন আইডিয়া, প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করার ফলে কোন জিনিস কাজ করবে, কোনটা করবেনা, কিভাবে প্রোটোটাইপ বানানো যায় তা সম্পর্কে হাতে কলমে ধারনা পেয়ে যায়।
ইন্সটাকার্টের আগে প্রায় ২০ টি স্টার্টআপ আইডিয়া নিয়ে সে কাজ করেছিল।
এরমধ্যে একটা আইডিয়া ছিল আইনজীবীদের জন্য একটা স্যোশাল মিডিয়া তৈরি করা। এই প্রজেক্টের জন্য ১ মিলিয়ন ডলার ইনভেস্ট ও যোগাড় করে। ১ বছরের মাথায় সে বুঝতে পারে এই বিজনেসে তার কোন আগ্রহ নেই। আর আগ্রহ না থাকলে সে স্টার্টআপ কখনো আগাবেনা। ইনভেস্টরদের জানিয়ে নিজের কোম্পানি ত্যাগ করে।
একই সময়ে স্টার্টআপের ব্যার্থতা, মায়ের অসুখ , সব মিলিয়ে তার অবস্থা ছিল খুবই ডাউন।
২০১২ সাল।
একসময় তার খেয়াল হয় গত ২ বছরে তার কেনাকাটা, মানুষের সাথে যোগাযোগ সবই হয়েছে অনলাইনে। কিন্তু বাসে করে মার্কেট যাওয়া, গ্রোসারি কেনা, লাইনে দাঁড়িয়ে বিল দেয়া , এই সমস্যার কোন সলিউশন এখন অব্দি নেই। নিজের খারাপ সময়টা পার করার সময় এই আইডিয়া তাকে নতুন করে শক্তি যোগায়।
“this was like fall in love. you can’t stop thinking about it”
– ইনস্টাকার্ট আইডিয়া মাথায় আসার পর মেহতার অনুভূতি।
Safeway.com নামে একটা গ্রোসারি স্টোর থেকে তাদের ইনভেন্টরি( স্টকে থাকা পণ্য) স্ক্রাপ করে এপ বানানো শুরু করে। ততদিনে তার বিজনেস মডেল রেডি হয়ে ছিল । তার অ্যাপ থেকে যার গ্রোসারি দরকার সে অর্ডার দিবে, আর যাদের এক্সট্রা ইনকাম প্রয়োজন, শপ থেকে কিনে সেসব গ্রোসারি ডেলিভারি দিবে।
প্রথম কয়েকদিন শুধুমাত্র তার বন্ধুরা ব্যাবহার করলেও, ওয়ার্ড অব মাউথের ফলে দিন দিন ব্যাবহারকারী সংখ্যা বাড়তে থাকে।
ইন্সটাকার্টের প্রথমদিনেই আপূর্বা ধারনা করেছিল, তার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্ধন্দী হবে অ্যামাজন । প্রোডাক্ট / সার্ভিসের দাম কমিয়ে অ্যামাজনের সাথে কম্পিট করা যাবেনা। কারণ তাদের বিলিয়ন ডলার ইনভেস্ট আছে । প্রতিপক্ষকে শেষ করার জন্য অ্যামাজন প্রয়োজনে ফ্রিতেই দিয়ে দিবে। আর দুই বছর আগে ডায়পার ডটকম কে কিভাবে অ্যামাজন শেষ করেছিল তা আপূর্বার দেখা আছে।
আপূর্বা খেয়াল করে,
দেশে অনেক কাস্টমার আছে যারা অ্যামাজনকে পছন্দ করেনা। তারা তাদের পাশের দোকানগুলোকে সাপোর্ট দিতে চায়। ইন্সটাকার্টে যেহেতু সব রিটেইল স্টোরের ইনভেন্টরি আছে, অ্যামাজনেও এত অপশন নেই।
প্রথমদিকে ক্রেগলিস্ট থেকে ডেলিভারিম্যান হায়ার করে নিজের টাকা নিয়ে তাদের পে করত।
কাস্টমারের অর্ডারে কোন পণ্য না থাকলে ডেলিভারিম্যানরা সরাসরি কল দিত এবং কাস্টমারকে অন্যান্য সাজেশন ও সাহায্য করত। এই বিষয়টা ইন্সটাকার্টের প্রতি কাস্টমারের বিশ্বাসটা বাড়িয়ে দেয়।
কোম্পানির চাকা সচল রাখতে তার দরকার ছিল দ্রুত ইনভেস্টমেন্ট। তার জন্য সে YCOMBINATOR এর কাছে যেতে চাচ্ছিল । YCOMBINATOR হলো একটা ইনকিউবেটর, যেখানে সিলেক্টেড স্টার্টআপসমুহকে নার্চার ও ইনভেস্ট দেয়া হয়।
কিন্তু ততদিনে YCOMBINATOR এ এপ্লাই করার ডেট শেষ।
লেট এপ্লিকেশন রিযেক্ট হওয়ার পর আপূর্বা ভাবলো “যারা রিজেক্ট করেছে, তারা কি আধো জানে INSTACART কি, কিভাবে কাজ করে ? “
তখন সে ওয়াই কম্বিনেটরের এড্রেসে বিয়ার অর্ডার করে পাঠায়, আর জানায় এটাই ইন্সটাকার্ট।
পরেরদিন সে কল পায় আর ইন্টারভিউ পর্ব পার করে YCOMBINATOR এর ফান্ড পায়।
কাস্টমার বাড়ার সাথে সাথে তারা বিভিন্ন গ্রোসারী স্টোরের সাথে পার্টনারশিপে যায়। ফলে কাস্টমারটা কম দামে, সামান্য ডেলিভারি ফি দিয়ে ঘরে বসেই সেরা জিনিস পেয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে তাদের ৫০০ টির বেশি গ্রোসারি স্টোরের সাথে পার্টনারশিপে আছে।
গ্রোসারি চেইনগুলো নিজেরাই হোম ডেলিভারি দেয়ার পরিবর্তে ইন্সটাকার্ট ব্যাবহারের কারণ হলো, ইন্সটাকার্ট একটা টেকনোলজি বেইজ কোম্পানি। তারা কাস্টমারের সমস্যাওকে টেকনোলজি ব্যাবহার করে সমাধান করছে। আর গ্রোসারি স্টোর / মুদি দোকানগুলো ফুড সাপ্লাই, ম্যানেজমেন্টে বেশি অভিজ্ঞ, টেকনোলজিতে না।

করোনা ভাইরাস মহামারীতে অনলাইন গ্রোসারী শপিং বাড়ায় ইন্সটাকার্টের মত হোম ডেলিভারি কোম্পানীর গ্রোথ অবিশ্বাস্যরকম বাড়ে।
বর্তমানে ইন্সটাকার্টের ৫০০,০০০ কন্ট্রাক্টর আছে, যারা অনলাইন অর্ডার নিয়ে তা ডেলিভারি করে। আমেরিকা আর কানাডা মিলিয়ে ইন্সটাকার্ট ব্যাবহারকারী প্রায় ১০ মিলিয়ন ।
বর্তমানে ইন্সটাকার্টের ভ্যালুয়েশন প্রায় ৩৯ বিলিয়ন ডলার। ইন্সটাকার্টের মূল প্রতিদ্ধন্ধী অ্যামাজন প্রাইম আর ওয়ালমার্ট। এই দুই জায়ান্ট কোম্পানির সাথে টেক্কা দিয়ে নিজেদের শক্ত অবস্থান ধরে রাখার জন্য ইন্সটাকার্টকে এক্সট্রা কিছুই করতে হবে।





