২০০৯ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় কেভিন সিস্ট্রম ট্রাভেল এপ ডেভলপ করার করে, যেটার নাম দেন Burban. এটা মূলত চেক ইন এপ ছিল, যার মাধ্যমে আপনি বন্ধুদের জানাতে পারেন আপনি কোন রেস্টুরেন্টে গেলেন, কোন দর্শনীয় স্থানে ঘুরলেন। সে সময় লোকেশন শেয়ার বেসড স্টার্টআপের ট্রেন্ড চলছিল। সে জোয়ারে গা ভাসায় কেভিন সিস্ট্রমও। লোকেশন শেয়ারে সাথে তারা ছবি পোস্ট করার সিস্টেম চালু করে আর এটা তাকে অন্য কম্পিটিটরদের থেকে আগায় রাখে।
প্রথম দিকে শুধু মাত্র তাদের বন্ধুবান্ধবরাই ব্যাবহার করত। স্টার্টআপকে বড় করার জন্য ইনভেস্টর খুজা শুরু করলে, স্টিভ এন্ডারসন ইনভেস্টে রাজি হয়, কিন্তু শর্ত জুড়ে দেয় যে , একজন কো-ফাউন্ডার নিতে হবে।
ধ্যান-ধারনা মিল হওয়ায়, একই ভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ার মাইক ক্রিগারকে কো ফাউন্ডার হতে অফার করে।
ইনভেস্টর প্রথম ধাপে তাদের ৫০ হাজার ডলার দেয়, যেটা তাদের চিন্তার ও বাইরে ছিল। এরপর আরো কয়েকজন ইনভেস্টর সারা দেয় এবং তাদের ইনভেস্ট প্রায় “হাফ মিলিয়ন” দাঁড়ায়। কোন অফিস ছাড়াই, শুধুমাত্র একটা প্রোটোটাইপ দেখিয়ে তারা এত ইনভেস্ট জোগাড় করে। তখন তাদের আস্থা আরো বেশি জন্মে যে, না ! এই স্টার্টাপ দাঁড় করানো সম্ভব । তখনো শুধুমাত্র ১০০ জন্য ইউজার ছিল তাদের।

The Lean Startup বইয়ে একটা লাইন ছিল, “Don’t ask why people don’t use your service, ask why they use your service”
এই কথা অনুসরন করে তারা দেখে যে, ছবি শেয়ারিং ব্যাপারটাই তাদের বেশি আকর্ষন করে। এরপর তারা ফটো শেয়ারিং এর ব্যাপারটায় বেশি ফোকাস করা শুরু করে।
যেহেতু Burban কাজ করছেনা,
ফটোশেয়ারিং ব্যাপারটা টার্গেটে রেখে নতুন এপ বানানোর চেষ্টা চলে।
এপের নাম দেয় Instagram. (instant camera+ telegram)
এদিকে,
Kevin Systrom মেক্সিকোতে তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে বিচে হাটার সময় ফটো শেয়ারিং নিয়ে কথা বলছিল। কিন্তু তার গার্লফ্রেন্ড কমপ্লেইন করে যে, তার ছবি খুব একটা ভালো আসেনা, কিন্তু তার ফ্রেন্ড অনেক ফিল্টার ইউজ করে ছবিকে শাইনি করে এরপর আপলোড দেয় বলে খুবই সুন্দর দেখায়। কেভিনকেও তাদের এপ ফিল্টার সঙ্গযুক্তের সাজেশন দেয়।
তখনি কেভিনের মাথায় হিট করে, হ্যা, এটাই তো তারা চাচ্ছিল। তখনি বিচ থেকে দৌড় দিয়ে সে কম্পিউটার নিয়ে বসে পড়ে এবং তাদের এপে ফিল্টার যুক্ত করা শুরু করে।
মানুষ ছবি শেয়ার করতে চায়, আর সে ছবিকে আরো সুন্দর করে তুলতেই মূলত তারা কাজ শুরু করে।
অক্টোবর ২০১০ সালে তারা নতুন এপ, অ্যাপল স্টোরে আপ্লোড করে। শুরু হয় ঝড়!
প্রথম ২৪ ঘন্টায় ২৫,০০০ মানুষ সাইন ইন করে। জার্মানি, হংকং, সুইডেন সব যায়গার মানুষ ।
তাদের ধারনাও ছিলনা এত রিচ হবে। কয়েকঘন্টার পর পর সার্ভার ডাউন হয়ে যায়। আবার কাজ করতে হয়, আবার ডাউন।
তখনকার মোবাইল নেটওয়ার্ক অতোটা ভালো ছিলনা। ফলে অনেকে সময় ইউজাররা নেটওয়ার্ক সমস্যা মনে করত।
তখন মাত্র আইফোন ৪ রিলিজ হয়। সামান্য ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবি ফিল্টারের সাহায্যে এত অসাধারণ রূপ দেয়া যায় বলেই ইন্সটগ্রামের ইউজার দাবানলের মতো ছড়াচ্ছিল।
তখন তাদের মার্কেটিং এর জন্য কয়েকজন ডিজাইনার , আর্টিস্টকে হায়ার করে। যারা মোবাইলে ছবি তুলে সেগুলো ইন্সটাগ্রাম ফিল্টার দিয়ে অসাধারণ করে তুলে। এতে মানুষের আগ্রহ আরো বাড়ে।
এক বছরের মাথায় তাদের ইউজার ১০ মিলিয়নে পৌছায়। এত ইউজারের জন্য একদিকে তারা সার্ভার আপ রাখার কাজ করে, অন্যদিকে বিভিন্ন ইনভেস্টররা যোগাযোগ করার চেষ্টা চালায়।
সেসময় ইন্সটগ্রাম ছাড়াও অনেক ভালো ভালো শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ছিল। তারপরেও ইন্সটগ্রাম সফল ছিল।
তার প্রধান কারণ ছিল পারফেক্ট টাইমিং।
তখন মানুষজনের পকেটে পকেটে স্মার্টফোনের সাথেযুক্ত ক্যামেরা ছিল। ইন্সট্যান্ট ছবি তুলে সেগুলো ঘষামাজা করে সুন্দর করে তুলার জন্য ইন্সটাগ্রাম ভালো প্ল্যাটফর্ম ছিল।
ফেইসবুক, টুইটার ছবি শেয়ারের জন্য অতটা জনপ্রিয় ছিল না। অন্যান্য ফটো শেয়ারিং সার্ভিসগুলো লিমিডেট ও ফ্রেন্ডস অনলি ছিল। ইন্সটাগ্রাম ছিল ওপেন প্ল্যাটফর্ম।
২০১২ সালে ফেইসবুক ১ বিলিয়ন ডলারে ইন্সটাগ্রাম কিনে নেয়, কিন্তু শর্ত থাকে ইন্সটাগ্রাম নিজের মত কাজ করতে পারবে।
পরবর্তীতে কোম্পানীতে মার্ক জুকারবার্গের প্রভাব বাড়তে থাকলে কো ফাউন্ডাররা কোম্পানি থেকে সরে দাঁড়ায়।

বর্তমানে মাসিক ইন্সটাগ্রাম ব্যাবহারকারীর সংখ্যা ১ বিলিয়নেরও বেশি। এড, শপিং সিস্টেমে যুক্ত করার ফলে ফটো শেয়ারিং এই প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠছে অনলাইন শপিং এর অন্যতম মাধ্যম।
টিকটক কিংবা ক্লাবহাউজের মত নতুন নতুন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে যারা ইউজার দখলের জন্য নিত্য নতুন ফিচার যুক্ত করে যাচ্ছে। এসবের ভিড়ে ইন্সটাগ্রাম নিজেদের শ্রেষ্টত্ব কতদিন ধরে রাখতে পারবে , তা সময়ই বলে দিবে
Source: Businessinsider
NPR





