james Dyson

জেমস ডায়সনঃ একবার না পারিলে দেখ ৫০০০ বার

পৃথিবীর সেরা কয়জন আবিষ্কারকের নাম বলতে বললে প্রথম দিকে আসবে টমাস এডিসনের লাইট বাল্ব আবিষ্কারের কথা। কিন্তু এডিসল লাইটবাল্ব আবিষ্কার করেনি। সে শুধু তখনকার থাকা বাল্বকে উন্নতর করেছে। 

জেমস ডাইসনও সেরকম একজন আবিষ্কারক। একসময় ভ্যাকিউম ক্লিনার ইন্ডাস্ট্রি HOOVER ব্র্যান্ডের দখলে ছিল , তখন ভ্যাকিউম ক্লিনারের অপর নাম ছিল হুভার। 

জেমস ডায়সন তখনকার ভ্যাকিউম ক্লিনারকে আরো উন্নত করার উন্নত সারাদিন গ্যারেজে পড়ে থাকতেন। এক দিন এক পার্ট চেঞ্জ করে দেখতেন । দীর্ঘ ৫ বছর ধরে প্রায় ৫০০০ প্রোটোটাইপ বানানোর পর সে পারফেক্ট ভ্যাকিউম ক্লিনার তৈরিতে সক্ষম হয়। 

ডায়সনের জন্ম ও বেড়ে উঠা ইংল্যান্ডে। বোর্ডিং স্কুলে পড়ালেখা শেষে Royle College of Art London এ ফার্নিচার ডিজাইনের উপর পড়ালেখা করেন। 

তার সাথে পরিচয় হয়ে সেসময়কার ইঞ্জিনিয়ার, উদ্যোক্তা জেরিমি ফ্রাই এর সাথে। জেরিমি ফ্রাই ছিল ভিন্নধর্মী মানুষ। সে এক্সপার্টদের তেমন পছন্দ করতেন না। বরং আগ্রহী, উচ্চবিলাশী তরুনদের কাজের সুযোগ করে দিতেন। ডায়সন আর জেরিমি ফ্রাই মিলে হাই স্পিড বোট তৈরি করে বিক্রি ও শুরু করেন। জেমস ডায়সনের বোট তৈরি বা বোট বিক্রির কোন অভিজ্ঞতা না থাকলেও জেরিমি ফ্রাই এর উৎসাহে তার সব শেখা হয়। তাদের দুজনের একসাথে ৫ বছর কাজ করাটা ডায়সনের জীবনের টার্নিং পয়েন্ট হয়।

ফ্রাই এর কোম্পানি থেকে আলাদা হয়ে সে নিজের মত কাজ করার স্বিদ্ধান্ত নেয়। 

প্রথমে তার আবিষ্কার wheelbarrow (বাগানে কাজ করার ছোট ঠেলাগাড়ি) এর নতুন ডিজাইন। রেগুলার wheelbarrow ভাঙ্গা যায়গা বা নরম মাটিতে চালাতে সমস্যা হয়। তাই সে সামনের চাকায় গোল বল লাগিয়ে দেয়। ফলে আর ভাঙ্গা যায়গায় ঢেবে যায়না। যদিও তার তার এই নতুন Ballbarrow বিক্রি করে খুব একটা প্রফিট হয়নি, কিন্তু এই কনসেপ্ট পরবর্তীতে নতুন আবিষ্কারে কাজে লাগে। 

Ballbarrow

১৯৭৯ সালের দিকে ভ্যাকিউম ক্লিনারকে আরো ইফেক্টিভ ভাবে তৈরি করার আইডিয়া তার মাথায় আসে। তার কোম্পানির ( Ballbarrow সেল করত যারা ) অন্যদের কাছে যখন সে প্রস্তাব উত্থাপন করে, সবাই বলে, এটা যদি ভালো আইডিয়া হতো জায়ান্ট কোম্পানিগুলো এতদিনে বানিয়ে ফেলত। এরপর তাকে নিজের কোম্পানি থেকেই বের করে দেয়। আসলে ভ্যাকিউম ক্লিনার জিনিসটা খুব ইন্টারেস্টিং জিনিস না। যার ফলে এই জিনিস নিয়ে কাজ করা বা নতুন প্রযুক্তি যোগ করার দিকে কারোরই আগ্রহ ছিল না। 

নতুন কনসেপ্টে ভ্যাকিউম ক্লিনার বানানোর জন্য তার পুরনো বন্ধু জেরিমি ফ্রাই থেকে ৪৯% আর বাকি ৫১% নিজে লোন করে কাজ শুরু করেন। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৪ সাল অব্দি দীর্ঘ ৫ বছর নিজের গ্যারেজে প্রোটোটাইপের পর প্রোটোটাইপ বানাতে থাকে। ৫০০০ এর ও বেশি প্রোটোটাইপ বানানোর পর সে তার কাঙ্খিত ভ্যাকিউ ক্লিনার বানাতে সফল হয়। 

কম্পিউটার, পর্যাপ্ত টাকা, লোকবল না থাকায় প্রতি প্রোটোটাইপে একটা একটা জিনিস চেঞ্জ করে , তার রিয়েকশন দেখতে হচ্ছিল। 

এই প্রোটোটাইপ বিভিন্ন কোম্পানির কাছে উত্থাপন করলেও , কেউ ম্যানুফ্যাকচার করতে আগ্রহ দেখায়নি। 

প্রতিবার রিজেক্টের পর নতুন উদ্যমে ম্যানুফেকচারার খোঁজার কাজ শুরু করে। 

এপেক্স নামে এক ছোট কোম্পানির মাধ্যমে ফাইনালি তারা জাপানে ম্যানুফেকচার করে সেল করে। দাম বেশি হলেও, জাপানের মার্কেটে সে ভ্যাকিউম ক্লিনারের ভালো ডিমান্ড ছিল। কিন্তু অন্য কোম্পানির মাধ্যমে সেল করার সমস্যা হচ্ছে নিজের প্রপার কন্ট্রোল থাকেনা। 

তাই জেমস ডায়সন নিজেই কোম্পানি শুরুর প্ল্যান করে। তার ধারনা ছিল, জাপানে বিজনেস করে আসছে, ইঞ্জিনিয়ারিং , ডিজাইন নিয়ে অনেকদিন কাজ করছে, সবাই তাকে নতুন কোম্পানি শুরু করতে টাকা দিবে। কিন্তু তার ধারণাকে মিথ্যা করে ভেঞ্চার ক্যাপিটালগুলো ইনভেস্টে অনাগ্রহ দেখায়।
সর্বশেষে একটা ব্যাংক তাকে লোন দেয়। 

পরে জানা যায়, ঐ ব্যাংকের মালিক তার স্ত্রীর কাজে ডায়সন ভ্যাকিউম ক্লিনারের ফিটব্যাক ভালো পায়। আর, কয়েক বছর আগে তার আইডিয়া কপি করায় অন্য কোম্পানির নামে মামলা করে জিতেও যায়। এতে করে ব্যাংক ম্যানেজারের তার উপর বিশ্বাস ছিল । 

ব্যাংক থেকে পাওয়া ৬০,০০০ ডলার , আর কয়েকজন কর্মী নিয়ে শুরু হয় তার কোম্পানির চলা। ভিন্নধর্মী ডিজাইন, আউটলুক ও ইজি ব্যাবহার সুবিধার কারণে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। 

১৯৯৫ সালে, মাত্র ২ বছরে, ডায়সন ভ্যাকিউম ক্লিনার ইংল্যান্ডের ১ নাম্বার বেস্ট সেলারে পরিণত হয়।   

২০০২-৩ সালে Best Buy এর মাধ্যমে তারা আমেরিকান মার্কেটে প্রবেশ করে।
ধীরে ধীরে ব্লেডলেস ফ্যান, এয়ার পিউরিফায়ার, হ্যান্ড ড্রায়ার সহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি করতে থাকে। 

প্রথম দিকে কোম্পানির সব ব্যাপারগুলো তাকে দেখতে হয়, পরে আস্তে আস্তে তার ফোকাস ইঞ্জিনিয়ারিং এ সরে আসে ,যেটা তার প্রিয়।

২০১৭ সালে তিনি The Dyson Institute of Engineering and Technology প্রতিষ্ঠা করেন । এই ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা পড়ালেখার পাশাপাশি ডায়সন কোম্পানিতে পার্টটাইম জব করতে পারে। এতে করে একদিনে যেমন তাদের শেখা জ্ঞান বাস্তবে প্রয়োগ করতে পারে, অন্যদিকে জবের স্যালারি দিয়ে তাদের টুইশন ফি কাভার হয়ে যায়। 

একসময় ঘরবাড়ি বন্ধক দিয়ে, লোনে ডুবে থাক জেমস ডায়সনের বর্তমান সম্পদ প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার। 

তার চেষ্টা ছিল, নিত্যপ্রয়োজনীয় টেকনোলজিসমুহকে আরো সহজ ও ব্যাবহারযোগ্য করে তোলা। যা পরবর্তীতে তাকে বিলিয়নয়ার বানায়। সাথে দৈনন্দিন জীবনে আনে বিশাল পরিবর্তন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *